Feeds:
পোস্ট
মন্তব্য

বৃষ্টি, ভালোবাসা এবং নাগরিক

এক রোববার দুপুরে রোদে পুড়তে পুড়তে বাসায় আসি। সেই রোববার রাতেই আকাশ ভেঙ্গে নামে বৃষ্টি। সাথে কিছুটা বিদ্যুত চমকায়, দুয়েকটা বাজ ও বুঝি পড়ে।

কেউ কেউ ভালোবেসে ফেলে প্রায় একযুগ আগে আর বর্তমানের জন্য রাখে শুধুই হাহাকার। তবু টিকে থাকা যায় কারণ মানুষ পৃথিবীতে এসেছে টিকে থাকার জন্যই। স্মৃতি থাকে না কিছুই , শুধু মাঝে মাঝে মোবাইলের রিংটোনটা হয়তো একটু জ্বালায়। তবু সেটা মেনে নেওয়া যায় কারণ মোবাইলের বহু আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিলো প্রেম।

মানুষ ভুলে থাকতে চায়, কিন্তু হয়তো ভুলে থাকতে চায় না তার শরীর। বহু আগে ভুল করে সন্ধ্যা হই হই কোন এক বিকেলে যখন তারা জড়িয়ে ধরে ভীতভাবে প্রথম চুমু খেয়েছিলো, তার স্মৃতি কোথায় যেন একটা দগদগে ঘা রেখে যায়। কিন্তু আশ্চর্য, তবু মানুষ পারে। মানুষের মরে যেতে ইচ্ছে করে কিংবা আফসোস জাগে কেন জন্ম হলো, তবু মানুষ বেঁচে থাকে।

কাচের জানালায় একসময় সেই রোববারের বৃষ্টির ছাট এসে লাগে, ঝাপসা হয়ে যায় সামনের ভবিষ্যত। ছবির মত পরিষ্কার হয়ে উঠে একযুগ আগের সেই ভালোবাসার অতীত, যাদেরকে আমরা বাঁচিয়ে রাখি সযত্নে।

নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল [মূল গ্রন্থের প্রচ্ছদ]

নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল

কিছুদিন আগেই শেষ হলো ঐতিহ্য প্রকাশনীর মাসব্যাপী বাৎসরিক সেল, সেখান থেকেই কিনেছিলাম গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের “নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল” , যার অনুবাদ করেছেন অশোক দাশগুপ্ত। মার্কেজের শতবর্ষের নিঃসঙ্গতা পড়েছিলাম জি এইচ হাবীবের অনুবাদে। প্রচন্ড বিরক্তিকর সেই অনুবাদ পড়ার পর থেকেই খুব সাবধানী হয়ে গিয়েছিলাম অনুবাদ পড়ার ক্ষেত্রে, বিশেষত মার্কেজের লেখার অনুবাদগুলি। কিন্তু সেই ভয় অনেকটাই দূর করে দিয়েছেন অনুবাদক , চমৎকার ঝরঝরে একটি অনুবাদ উপহার দিয়ে। মূলত তাঁর চমৎকার অনুবাদের কারণেই বইটি অনেকাংশে সুখপাঠ্য হয়েছে ( অবশ্যই সবার আগে প্রধান কৃতিত্ব মূল লেখকের ), এবং আমি বইটি নিয়ে দুটি কথা বলার সাহস যোগাতে পেরেছি।

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ – নামটা শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে দক্ষিন আমেরিকা, বিপ্লব, জাদু বাস্তবতা আর নিঃসঙ্গতা। জাদু-বাস্তবতা বাদে আর বাকি সবকটি উপাদান নিয়েই গড়ে উঠেছে “নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল” উপন্যাসিকা( Novella )টি। এই গল্পের পটভূমি হিসেবে মার্কেজ ব্যবহার করেছেন কলম্বিয়ার “লা ভায়োলেন্সিয়ার” দিনগুলিকে, যখন সেনাশাসন আর নানা ধরণের সেন্সরশিপ আরোপ করা হচ্ছে সমাজের সর্বত্র।

ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত অনুবাদের প্রচ্ছদ

ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত অনুবাদের প্রচ্ছদ

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন বৃদ্ধ কর্নেল, যিনি মাত্র বিশ বছর বয়েসেই কর্নেল উপাধি পেয়েছিলেন কর্নেল অরলিয়েনো বুয়েন্দিয়ার ০১ সাথে বিপ্লবে অংশ নিয়ে। কাহিনী মূলত এগিয়ে চলে বৃদ্ধ কর্নেল, তাঁর হাঁপানি আক্রান্ত স্ত্রী এবং তাঁদের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনের নানা অনুষঙ্গকে নিয়ে। কর্নেল প্রায় পনের বছর ধরে অপেক্ষা করে আছেন প্রতিশ্রুত পেনশন পাবার আশায়। প্রতি শুক্রবারই তিনি লঞ্চঘাটে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পেনশনের চিঠির অপেক্ষায়। সদ্যপ্রয়াত ছেলের রেখে যাওয়া মোরগটিকে তিনি সযত্নে লালন করেন মোরগ লড়াই এ অংশ নেওয়ানোর জন্য, নিজে অভুক্ত থাকেন শুধু মাত্র মোরগটিকে এক বেলা খাওয়ানোর জন্য।

এরকম বহুমাত্রিক টানাপোড়েনের সমান্তরালে লেখক নিখুঁত রেখায় একেঁছেন সমাজের চিত্র, আর ব্যক্তি কর্নেলের সার্বক্ষণিক লড়াই, নিজের সাথে নিজের। যিনি প্রতিনিয়ত অনুভব করেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।কর্নেলের দারিদ্র্যটুকু বেশ প্রকটভাবেই ফুটে উঠে প্রথম লাইনে যখন লেখক বলেন,

……… একটি চাকুর সরু মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কফির সর্বশেষ দানাটা পর্যন্ত কেতলির সাথে মেশালেন। কফি টিনের কিছু মরচের গুড়াও হয়তো তাতে মিশে গেল………

কিন্তু দারিদ্র্যের চরমতম কষাঘাতেও কর্নেল তার আভিজাত্যবোধ কিংবা আত্মাভিমানে বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগতে দেননি। তাই উপন্যাসিকটা মূলত একজন বৃদ্ধ, নিঃসংগ পরাজিতের সৈনিকের মনঃস্তাত্বিক দ্বন্দ্বের কাহিনী। একদিকে যখন দিনে কীভাবে খাবার জোটাবেন সেই চিন্তা করেছেন, সেই একই লোকই আবার তার পোষা নধর কান্তি মোরগটি বিক্রি করেও, পরবর্তীতে মত পালটে অগ্রিম নেওয়া টাকাটুকু ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সমস্ত উপন্যাসটিই কলম্বিয়ার তৎকালীন সময়ের চিত্রকে ধারণ করে। দুর্নীতিগ্রস্ত সামরিক শাসনাধীন, ধর্ম প্রভাবান্বিত এক সমাজকেই আমরা দেখতে পাই, যখন কর্নেলের ছেলেকে হত্যা করা হয় মোরগ লড়াই এর আসরে কিংবা গির্জার যাজক ঘন্টাধ্বণি বাজিয়ে সিনেমার সেন্সরশিপ ঘোষণা করেন এবং দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেন কারা সেই সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। এ উপন্যাসিকাতেই আমরা তৎকালীন কলম্বিয়াতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এক কুটিল রূপ এর দেখা পাই , যখন কর্নেলের উকিল তাঁকে জানান যে, ফাইল এখন কোন দপ্তরে আটকা পড়ে আছে তা জানা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। এসব অনিয়মের সমান্তরলেই লেখক একেঁছেন সামন্ততান্ত্রিক সমাজের চিরায়ত রূপ। ‘শাবাস’ নামের যে লোক একসময় কর্নেলের গ্রামে এসেছিলো গলায় সাপ জড়িয়ে ঔষধ বিক্রি করতে, নানা রকম কারসাজিতে সেই বনে যায় সমাজের সবচেয়ে বড় মহাজন – লোক ঠকানোতে যিনি সিদ্ধহস্ত। তৎকালীন সমাজের অসঙ্গতি আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের প্রকট রূপের কথা জানতে পারি যখন গল্পের প্রথম ভাগেই লেখক জানান, বহুদিন পর সে গ্রামে একজন লোক সুস্থ-স্বাভাবিক নিয়মে মারা গিয়েছেন।

এত সব অনাচার, অবিচার আর হাহাকারের মধ্যেও টানটান হয়ে থাকে কর্নেলের আত্মাভিমান। এ কথা আমরা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যখন কর্নেলের স্ত্রী বলেন,

………আমরা অনেক দিন চুলায় হাড়ি উঠাই নি। এটা প্রতিবেশিরা যাতে বুঝতে না পারে সে জন্য কত দিন আমি পাথর কুড়িয়ে হাড়িতে সিদ্ধ করেছি ………

প্রতিনিয়ত কর্নেলের মধ্যে দুটি বিপরীত সত্বা কাজ করেছে, একটি চেয়েছে মোরগটিকে বিক্রি করে নিজেদের উদরপূর্তি করতে, একই সাথে অপরটি চেয়েছে যেই ‘শাবাস’ নামক মহাজনের কাছে বিক্রি করবে, তার দেখা যেন আজকে না পাওয়া যায়। প্রচ্ছন্নভাবে বোঝা যায়, এত দারিদ্র্যের মধ্যেও কর্নেল স্বপ্ন দেখেছেন –  স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর পেনশনের টাকা ফেরত পাবার কিংবা মোরগ লড়াইয়ে জিতে নিজের দিন বদলের , হয়তোবা নতুন কোন বিপ্লবেরও।  এই স্বপ্নের সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যায়, যখন পোস্টমাস্টারের নিঃস্পৃহ কন্ঠে শোনা যায়ঃ

কর্নেল, নিশ্চিত করে মানুষের জীবনে যা আসে তার নাম মৃত্যু

সেই মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনেও কর্নেল লড়াই করে চলেন মোরগটাকে বিক্রি না করার জন্য। উপন্যাসিকাটির শেষ তাই অনেক বেশি আকর্ষনীয়, যখন কর্নেল পচাত্তর বছরে দেনা-পাওনার হিসেব মিটিয়ে নিস্পৃহ ভঙ্গিতে জীবনের মৌলিক সমস্যার সমাধান করেন।

এভাবেই লেখক বিস্তৃত ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন নিঃসঙ্গতাকে। দারিদ্র্য আর আত্মাভিমান সবকিছু ছাপিয়ে অন্তরালের নিঃসঙ্গতাই এ গল্পে মুখ্য হয়ে উঠে। গল্পের প্রতিটি ক্ষণ পাঠক, কর্নেলের চরিত্রের সাথে মিশে যান, অনুভব করেন সেই তীক্ষ্ণ জীবন যন্ত্রনা, শতবর্ষের বয়ে চলা নিরন্তর নিঃসঙ্গতাকে। আর এভাবেই নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল হয়ে উঠে একটি সার্থক মার্কেজীয় রচনা।

০১* কর্নেল অরলিয়েনো বুয়েন্দিয়া – মার্কেজ রচিত নিঃসঙ্গতার শতবর্ষ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র। এই উপন্যাসের জন্য মার্কেজ সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন।

ছবি

গত ছয় সাত বছর ধরে ইন্টারনেট বাসের এই সময়টাতে যে জিনিশটা সবচেয়ে বেশি দেখেছি, তা হচ্ছে চমৎকার সব ছবি। প্রথম দিকের গুগল ইমেজ সার্চ, পরে ফ্লিকারের সন্ধান পাওয়ার পর বুঝতে পারলাম এই বিশাল জালের নানা কোণে অসাধারণ সব ছবি লুকিয়ে আছে, যাদের দেখলে বিস্ময়ে মুখ হা করে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তবে এত চমৎকার সব ছবির মধ্যেও খুব কম ছবিই আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে, কিংবা ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছে। দুর্ভিক্ষের সেই অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ছবি দেখেও সত্যিকার অর্থে ততোটা ধাক্কা খাইনি, যতটা ধাক্কা খেয়েছি আমি দুইটা ছবি দেখে।

প্রথম ছবি ভাষা শহীদ বরকতের মায়ের–

শহীদ মিনারের সামনে �াষা শহীদ বরকতের মা

শহীদ মিনারের সামনে ভাষা শহীদ বরকতের মা

ছবিটা দেখা মাত্র আমি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হই। হতবিহবল একজন বৃদ্ধা রমনী, যার ছেলে জীবন দিয়েছে ভাষার যুদ্ধে, তাঁর চোখে এক ধরণের নীরব অভিযোগ দেখতে পাই আমি। শুধু মনে হয়, এ ছবিটার দিকে তাকানোর সাহসটুকু আমার নেই, সাহস নেই এই বৃদ্ধা মায়ের চোখের দিকে তাকানোর। হয়তো বহুকাল আগেই মারা গিয়েছেন এই বৃদ্ধা, তবু মনের কোথায় যেন একটা খচখচে ভাব থাকে, একটা অস্বস্তি,  একটা ভয় দানা বেঁধে উঠতে থাকে, মনে হতে থাকে আমরা দল বেঁধে হত্যা করেছি তাঁর ছেলেকে।

আরেকটা হচ্ছে ফুলবাড়ী আন্দোলনের সময় তোলা একটা ছবি।

আন্দোলন শুনলেই মনে হয় বিএনপি না আওয়ামীলীগ ? বিশ্বাস করতে পারি না, শুধু মাত্র নিজের অস্তিত্বের জন্য কেউ আন্দোলন করতে পারে। মিছিলে লোক দেখলে মনে হয়, এদেরকে তো টাকা দিয়ে ভাড়া করা হয়েছে। রাজনীতির অধঃপতনের ( শুধুই কি রাজনীতি ? আমাদেরও কি অধঃপতন হয় নি ? ) এই যুগে আন্দোলন শব্দটার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে গিয়েছে।

সেই হারানো বিশ্বাসটাই যেন নতুন করে জন্ম নেয় ছবিটা দেখলে। অশিক্ষিত-দরিদ্র এইসব মানুষের ভয়হীন পদচারণা কোথায় যেন একটুখানি আশার প্রদীপ জ্বালায়, যে আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে এই গ্রহের আদ্যোপান্ত।

কাটাকুটি -০২

মেলানকোলিঃ শিল্পী স্টেলা হোয়াইটের আঁকা

মেলানকোলিঃ শিল্পী স্টেলা হোয়াইটের আঁকা

মানুষের মন সত্যিই বিচিত্র। কখন কী কারণে যে মন ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে সেটাও সমান বৈচিত্র্যের। গত দু-তিন দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাতে আমার মন ভালো থাকা উচিত না এবং আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সেটা ছিলোও না। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে স্প্রেড স্পেক্ট্রামের উপর গতসপ্তাহে ল্যাবে করা আসা এক্সপেরিমেন্টের রিপোর্ট লেখতে যেয়ে একটা ব্যাপার খুব সহজেই ধরে ফেলার পর, মনে খুব ফূর্তি হল। বেশ ছোট একটা ব্যাপার, এজন্য মিনিট পাঁচেকের জন্য মন ভালো হতে পারে কিন্তু ফূর্তি ফূর্তি বোধ হওয়ার কথা না। তবু বেশ আনন্দ পাচ্ছি। যে রিপোর্টটা নিশ্চিন্তে ল্যাব পার্টনারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারতাম, সেটা নিজেই বসে বসে লিখছি।

কেন এরকম করছি ? একটু আগে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বুঝলাম, আমি আসলে পালাতে চাইছি। নিজের থেকে নিজেই পালাতে চাইছি। যে চিন্তাগুলি করতে ভালো লাগে না সেগুলি থেকে পালাতে চাইছি ; আর তাই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি কমিউনিকেশন থিয়োরির কোন সমস্যার সামান্য কোডিং এ। যাক, আনন্দ যখন পাচ্ছি সেটাই সই। নিজেকে নিরানন্দে রাখতে এই মূহুর্তে আর ইচ্ছা করছে না।

## একটা গল্প লেখার ইচ্ছা মাথায় খুব ঘুরঘুর করছে গতকয়েকটা দিন ধরে। আগামীকাল কোন কাজ না থাকলে, একটা প্লট ভাবতে হবে।

কাটাকুটি -০১

গতবছর এমন সময়ের টাইফয়েডটা আমাকে বেশ ভীতু বানিয়ে ফেলেছে। এরপর যে কারো দু-চারদিনের বেশি জ্বরের কথা শুনলে দুশ্চিন্তায় পড়ি, টাইফয়েড না তো ? অবশ্য গত এক বছরে আমার আর জ্বর হয়নি, তাই নিজেকে নিয়ে শান্তিতেই ছিলাম। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আরেক অগাস্টে জ্বরে পড়লাম। এবারের জ্বর অবশ্য তেমন বেশি না। ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মত উঠে, প্যারাসিটামল খেলেই নেমে যাচ্ছে। কিন্তু এবারও জ্বরের আয়ু প্রায় চার-পাঁচ দিন হতে চললো। বাইরে কিছু না বললেও, অস্বস্তিটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। অবশ্য জ্বরের কারণ দীর্ঘ তিন বছর পর ভেজা মাঠে প্রখর রোদে ফুটবল খেলার কারণে কি না, সেটাও নিশ্চিত না।

জ্বর নিয়েই আজকের পরীক্ষাটা দিলাম। আগামীকালও একটা পরীক্ষা আছে – সত্যবাবুর টেলিকমুনিকেশন। বিষয়টা আমাকে একদমই টানছে না, মনে হচ্ছে এর চেয়ে মোবাইল সেলুলার কমুনিকেশন সাবজেক্টটা ভালো ছিলো। অবশ্য মেজর মাইনরের প্যাঁচে আমরা সবাই কম বেশি জেরবার – এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো না ! বন্ধু শান্ত তাঁর ইচ্ছার বিপরীতে বাধ্য হয়েই দুটো ইলেক্ট্রনিকসের সাবজেক্ট নিয়েছে – ওর মাইনরের কোটা থেকে। মনে হচ্ছে এই মেজর মাইনর নিয়ে ডিপার্টমেন্টের আরো একটু চিন্তা ভাবনা করা দরকার।

নতুন এই জ্বরে আর কিছু না হোক, আমার চিন্তা ভাবনায় যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে নিশ্চিত। না হলে নিজের দিনপঞ্জি লেখার কোন পরিকল্পনা অন্তত আমার ছিলো না !

ছবিঃ পাবলো পিকাসোর আঁকা First Steps।

একা এবং নিঃসঙ্গতা

০১

নির্জন কৈশোরের রাতগুলিতে চুপচাপ বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মেঘের দিকে, তারার দিকে।  শুধু মনে হতে, যদি একটা বার যেতে পারতাম ঐ আকাশে। যেভাবে আজ আমি তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে, হয়তো কোন একদিন ওই আকাশ থেকে আমি তাকিয়ে থাকবো পৃথিবীর কোন বারন্দার দিকে, যেখানে বসে আছে নিষ্পলক কোন কিশোর।

০২

সমুদ্রের তীরে গভীর রাতে বসেছিলাম, গভীর রাতের নীরবতায় হেঁটেছিলাম কিছুটা পথ। তাকিয়ে ছিলাম আকাশের দিকে। মেঘগুলি সব ছুটে চলছিলো, দূরে সমুদ্রের গর্জন। অসহায় লেগেছিলো খুব – উপরে এই বিশাল আকাশ, সামনে দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র। এদের সামনে আমি কত তুচ্ছ , কত ক্ষুদ্র।

০৩

গভীর রাত। চুপচাপ একা শুয়ে আছি লঞ্চের উপরে ছাদে। নিকশ কালো আধাঁর – অমাবশ্যার রাত। নদীর হিমশীতল বাতাসে গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। আকাশ বয়ে চলছে নিরন্তর – হয়তোবা সময়ও।

০৪

কি হবে এত ইদুঁর দৌড় দিয়ে ? জি আর ই, টোফেল কিংবা নেটওয়ার্কিং – সব খুব অর্থহীন মনে হয় এক সময়। ইচ্ছা করে সবকিছু ছেড়ে চলে যাই এমন সময়গুলিতে। এই রাত, এই আকাশ, এই মেঘ, এই নিঃসঙ্গতার চেয়ে আপন আর কে আছে এই পৃথিবীতে ?

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফ্লিকার

এলিজি

০১

বিড়াল এর প্রতি আমার মনোভাব ছিলো নিরপেক্ষ – অন্তত বছর দুয়েক আগ পর্যন্ত। এর মধ্যে আমার বাসার আশেপাশে এক বিড়ালের ঘোরাফেরা শুরু হলো, যার কাজ ছিলো মূলত আমাদের বাসার সিড়ি নোংরা করা। সকালে নাকে হাত চাপা দিয়ে বের হওয়া ছিলো আমাদের নৈমিত্তিক ঘটণা। সেই থেকে বিড়াল দেখতে পারি না। বুয়েট ক্যাফেতেও পায়ের সামনে ঘুরঘুর করে বিরক্ত করার পর লাথি কশিয়েছিলাম দুয়েকবার – আঘাত করার উদ্দেশ্য ছিলো না একদমই।

০২

সন্ধ্যার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম টিউশনির জন্য। কয়েক পা সামনে এগুতেই দেখি  সেই বিড়ালটা উলটে পড়ে আছে। আঁতকে উঠলাম, সারা শরীরে মারের চিহ্ন। ঘুরে একটু তাকাতেই দেখি, প্রাণ আছে – নড়ছে – চোখ খুলে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। হেঁটে চলে গেলাম, কারণ আমার বেজায় তাড়াহুড়া।

০৩

রাতের বেলা বাসা থেকে বের হয়েছি, অনেকখানি সামনে যেতে দেখি বিড়ালটা রাস্তার উপর মরে পড়ে আছে, এবার আর নড়ছে না –  একটা চোখ এখনো খোলা। খুব বীভৎস লাগলো ব্যাপারটা দেখে , মনে হচ্ছে বিড়ালটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

০৪

এখন পর্যন্ত অবশ্য ঠিক করতে পারিনি কোনটা বেশি বীভৎস – মরার পরও বিড়ালের তাকিয়ে থাকা নাকি একটা বিড়ালকে এমন নির্দয়ভাবে প্রহার করা।

নিশিযাপন

রাত আড়াইটা। এ সময় আমার আর যাই হোক ব্লগ লেখার কথা না। কাজে অবহেলা, তাই শাস্তি বিশবার কান ধরে উঠা-বসা। বাকিটা পরে এসে লিখছি।

প্রলাপ -০১

নীলটা এসে সবুজটাকে ধাক্কা দিলো। তাল সামলাতে না পেরে সবুজটা উলটে পড়লো একদম গিয়ে লালের উপর। লাল নির্বিবাদ মানুষ – সবুজ এসে পড়া মাত্র আয় ভাই বুকে আয় বলে টেনে নিয়ে কালো হয়ে গেল। এসবের মধ্যে কে যেন ডাক দিলো- আরো একটা বানাইলাম – এইটা ধরা।বীচি রয়ে গিয়েছে, পটাশ পটাশ ফাটছে। “ খোকা রাজুদের বাসাটা কোনদিকে বলতে পারো” – উত্তর দেওয়ার আগেই কে যেন নাকে ক্লোরোফর্ম গুঁজে মধ্যপ্রাচ্যের জকি বানিয়ে দিলো। আমি কাঁদতে শুরু করলাম, “ জকিই যদি হল, জেনুইন জকি নয় কেন ”।এই যখন কাহিনী, কোন হারামজাদা জানি আকাশে ফুটো করে দিয়েছে আর চুইয়ে চুইয়ে জল পড়ছে – এই জলকে মাম ডাকবো না স্পা ডাকবো ভাবতে ভাবতেই উত্তর আসে স্পার্ম ডাকো।

আলগা ফাঁপর

কেউ কেউ আজকাল আমাদের আলগা ফাঁপর

দেয়, আমরা খাই এবং বুঝতে পারি যে এটা আলগা

ফাঁপর, তবুও কিছু বলি না, কারন মাগনা যে কোন খাওয়াই

আমরা ভালোবাসি।

তারা শুধু আমাদের ফাঁপরই খাওয়ায় না, সেইসাথে পাপড় খেতেও

জোরাজুরি করে, কিন্তু আমরা খেতে চাই না,

কারন পাপড় ফাঁপরের মত নিঃশব্দে খাওয়া যায় না।