আমরা তখন কলেজে পড়ি, আন্ডারগ্রাউন্ড কালচারের স্বর্ণযুগ। যারা ব্যান্ড মিউজিকের এই কালচারের সাথে পরিচিত না, তাদের জন্য জানানো যেতে পারে যে এই আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির না! এই আন্ডারগ্রাউন্ড হচ্ছে ব্যান্ডের- অনেকটা ভাবতে পারেন, মূলধারায় ঠিক অতোটা জনপ্রিয় নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নতুন ব্যান্ডগুলিই আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড (আরো কিছু ব্যাপার আছে, তবে আপাতত এভাবেই ভাবতে পারেন)। সে সময় আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলির মধ্যে আর্টসেলের দোর্দণ্ড প্রতাপ বললেও কম বলা হয়- দুঃখবিলাস আর অপ্সরী, মিক্সড অ্যালবামের এই দুই ট্র্যাক দিয়ে মোটামুটি উঠতি বয়েসি ছেলেদের মুখে মুখে আর্টসেল। এরপরই বের হলো তাঁদের প্রথম অ্যালবাম অন্য সময়- দুর্দান্ত সব গান ! কোনটা রেখে কোনটার কথা বলি !
ব্যান্ডের উঠতিকালে যা হয়, প্রকাশিত গান তো বটেই, অপ্রকাশিত গান নিয়েও মানুষের আগ্রহের কমতি থাকে না। সে সময়ই (কিংবা তারও বেশ কিছুটা পরে) প্রথম শুনি আর্টসেলের আনরিলিজড ট্র্যাক, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে। সত্যি বলতে কী গানটা আমার তেমন ভালো লাগেনি। অন্যসময়, ভুল জন্ম, রাহুর গ্রাস, দুঃখবিলাস, রূপক – এইসব গানের পাশে কেমন যেন পানশে লাগলো গানটা। তাই কম্পিউটারের কোন এক কোনায় অনেকদিন পড়েছিলো গানটা। এর মাঝে আর্টসেলের ক্রেজ অনেকটা কমে গিয়েছে, অ্যালবাম অনিয়মিত, আর গান শোনার কানও পেকেছে কিছুটা- সব গানই আর আগের মতো ভালো লাগে না। এরই মধ্যে একটা বৃষ্টির দিনে- ঠিক বৃষ্টির দিন না, প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমের একদিনের পর রাতের বেলা ঝুম বৃষ্টি নামলো। আমি গান খুঁজতে খুঁজতে ছাড়লাম ” এই বৃষ্টি ভেজা রাতে”।
এক সময়ের মোটামুটি গানটা শুধু মাত্র পরিবেশের গুণেই যেন মাথার মধ্যে একদম ঢুকে গেলো। খুবই হালকা ইন্সট্রুমেন্টাল ব্যবহার করে গাওয়া গানটার কথাও যে খুব আহামরি তা না, তবু লিংকনের “অদ্ভুত” গলায় “এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে, সময় আমার কাটে না” শুনলে মনে হয় সত্যি সত্যি যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। মাঝরাতের সেই ঝুম বৃষ্টির শব্দে গানটা শুনে একদম মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অবাক করা ব্যাপার হলো, এখন আর্টসেলের এই গানটাই বোধহয় আমার সবচে বেশি শোনা হয়। মাঝ রাতে যখন বৃষ্টি হয়, মাঝে মধ্যে গানটা শুনি। আজ আমার এই এই গানটা নিয়ে লেখার, কিংবা আদৌ লেখার কোন ইচ্ছা বা পরিকল্পনাই ছিলো না, কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির শব্দে মনে হলো, এর চে চমৎকার বিষয় আর কী হতে পারে লেখার !