গত ছয় সাত বছর ধরে ইন্টারনেট বাসের এই সময়টাতে যে জিনিশটা সবচেয়ে বেশি দেখেছি, তা হচ্ছে চমৎকার সব ছবি। প্রথম দিকের গুগল ইমেজ সার্চ, পরে ফ্লিকারের সন্ধান পাওয়ার পর বুঝতে পারলাম এই বিশাল জালের নানা কোণে অসাধারণ সব ছবি লুকিয়ে আছে, যাদের দেখলে বিস্ময়ে মুখ হা করে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তবে এত চমৎকার সব ছবির মধ্যেও খুব কম ছবিই আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে, কিংবা ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছে। দুর্ভিক্ষের সেই অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ছবি দেখেও সত্যিকার অর্থে ততোটা ধাক্কা খাইনি, যতটা ধাক্কা খেয়েছি আমি দুইটা ছবি দেখে।
প্রথম ছবি ভাষা শহীদ বরকতের মায়ের–

শহীদ মিনারের সামনে ভাষা শহীদ বরকতের মা
ছবিটা দেখা মাত্র আমি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হই। হতবিহবল একজন বৃদ্ধা রমনী, যার ছেলে জীবন দিয়েছে ভাষার যুদ্ধে, তাঁর চোখে এক ধরণের নীরব অভিযোগ দেখতে পাই আমি। শুধু মনে হয়, এ ছবিটার দিকে তাকানোর সাহসটুকু আমার নেই, সাহস নেই এই বৃদ্ধা মায়ের চোখের দিকে তাকানোর। হয়তো বহুকাল আগেই মারা গিয়েছেন এই বৃদ্ধা, তবু মনের কোথায় যেন একটা খচখচে ভাব থাকে, একটা অস্বস্তি, একটা ভয় দানা বেঁধে উঠতে থাকে, মনে হতে থাকে আমরা দল বেঁধে হত্যা করেছি তাঁর ছেলেকে।
আরেকটা হচ্ছে ফুলবাড়ী আন্দোলনের সময় তোলা একটা ছবি।

আন্দোলন শুনলেই মনে হয় বিএনপি না আওয়ামীলীগ ? বিশ্বাস করতে পারি না, শুধু মাত্র নিজের অস্তিত্বের জন্য কেউ আন্দোলন করতে পারে। মিছিলে লোক দেখলে মনে হয়, এদেরকে তো টাকা দিয়ে ভাড়া করা হয়েছে। রাজনীতির অধঃপতনের ( শুধুই কি রাজনীতি ? আমাদেরও কি অধঃপতন হয় নি ? ) এই যুগে আন্দোলন শব্দটার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে গিয়েছে।
সেই হারানো বিশ্বাসটাই যেন নতুন করে জন্ম নেয় ছবিটা দেখলে। অশিক্ষিত-দরিদ্র এইসব মানুষের ভয়হীন পদচারণা কোথায় যেন একটুখানি আশার প্রদীপ জ্বালায়, যে আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে এই গ্রহের আদ্যোপান্ত।
Read Full Post »