আজ বিকালে মিরপুর বাঁধের উপর গিয়েছিলাম। ঈদের দিন চারিদিকে মানুষের বন্যা। এর মধ্যে কপাল জোরে কীভাবে যেন একটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে গিয়েছিলাম। সাঁতার পারি না চারজনের কেউই তবু নৌকায় সানন্দে উঠে পড়লাম চারজনই। প্রথমে ঠিক হয়েছিলো আধা ঘন্টা ঘুরবো আমরা। সে হিসাবে আমার দায়িত্ব ছিলো পনেরো মিনিট যাওয়ার পর মাঝিকে নৌকা ঘোরাতে বলা।
আমরা যাচ্ছিলাম; অনেক জল, অনেক কচুরিপানার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু জলের নিঃস্তব্ধতাকে ভাঙ্গেনি কেউ; শুধু জলের মধ্যে বইঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। পনের মিনিট কেটে গেলো, আমরা নিশ্চুপ। আমাদের সামনেই জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির কিছু বিদ্যুতের টাওয়ার, চার পা ছড়ানো। নৌকা ক্রমশ সেগুলির ভিতর দিয়ে যেতে থাকলো। অনেকটা সময় কেটে গেল বহু বছরের জমে থাকা সব চিন্তায়। আকাশে অনেক মেঘ, আসন্ন ঝড়ের প্রস্তুতিতে অস্বাভাবিক মৌন হয়ে আছে চারপাশ।
নৌকা চলে আসলো টাওয়ারের একদম নিচে। মাথা উঁচু করে দেখতে পেলাম একদম চূড়াটাকে। নৌকা আস্তে আস্তে এগিয়ে চলছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত কোন এক ভূখণ্ডের দিকে। যতই এগুচ্ছি, দ্রিম-দ্রিম ঢাকের শব্দের মিইয়ে যাওয়া স্বর কানে এসে লাগছে। শৈশব মনটা আবার চঞ্চল হয়ে উঠলো, “কীসের শব্দ ?” আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেল শব্দটা !
বুঝতে পারছি চেতনার স্পষ্ট সীমারেখাগুলি কেউ যেন সযত্নে মুছে দিচ্ছে। লাল আর নীলের মাঝে কালোর সেই স্পষ্ট দাগটা যেন জলের স্রোতে ধুয়ে যাচ্ছে। মগজের মধ্যে সবকিছু মিলে মিশে একাকার। এখন আর মনে হচ্ছে না আমি মিরপুরে বাঁধের উপর, একটু দূরেই আশুলিয়া। স্মৃতির মধ্যে তালগোল পাঁকিয়ে আমি এখন পৌছে গেছি মহেশখালি। দূরের ওই গ্রাম এখন আর বিরুলিয়া না, বরং কুতুবদিয়া কি সোনাদিয়া।
দূরে সরে যাচ্ছে নৌকা, মুছে যাচ্ছে স্মৃতি। ক্রমশ স্মৃতিহীন এক মানুষ হয়ে যাচ্ছি আমি। চমৎকার !
মন্তব্য করুন